বুকের ভিতর নিয়ত চিনচিন করে দুঃখগুলো
জোঁকের মতো আশ্রয়দাতাদের আঁকড়ে ধরে।
রক্ত ঝরে রক্তক্ষরা গ্রন্থি থেকে।কখনো কখনো
ওরা যেন আলপিনে গাঁথা,বিঁধে থাকে অন্তরে।
  
প্রায়শ ওরা উপর্যুপরি ধেয়ে এসে তরঙ্গাকারে      
পূর্বসূরিকে আঘাত করে অদ্ভুত উল্লাসে তাকে      
উৎখাত করে সেই স্থানেই নীরবে বসে পড়ে।
এ যেন পালাক্রমে বদ্যির ভেষজ ভিন্ন ভিন্ন
কটু ঔষধ গলাধঃকরণের মতো চলে।পূর্বের
তিক্ততা গুলি ভুলে যাই নতুনের আবির্ভাবে।    
          
ভাগ্যিস,জীবনে দুঃখগুলো আসে ঘুরে ফিরে।
নয়তো আলপিনের মতো বিঁধে থাকা দুঃখে
বুক ফাটতো মাছের পটকার মতো কিংবা
ক্যানসার বাসা বাঁধতো সেথায়।মরতে হতো
তখন দুর্বিসহ যন্ত্রণায়।


প্রায়শ হিংসা-প্রতিহিংসা বীভৎস ঝড় তোলে,
দাপিয়ে বেড়ায় সমাজের বুকে।সেই ঘূর্ণি ঝড়ে
ক্ষয়ক্ষতি সীমাহীন।প্রাণহানি সহ বেঁচে থাকার
রসদে পড়ে টান।আরও কত কী।তখন চলে
দীপশিখার মতো টিমটিম করে বাঁচার প্রয়াস।
শক্তি হারিয়ে ঝড় থামে কিংবা চলে যায় সে
ভিন্ন পথে।শেষে নতুন সূর্যোদয় হয় পূর্ব দিগন্তে।
আয়লা ও বুলবুলের মতো অজস্র জানা-অজানা
বীভৎস ঘূর্ণিঝড়ের সাক্ষী পাথরপ্রতিমা,নামখানা।
তছনছ করেছে ওদের বারবার।দেখি তবু ওদের
করতে পারেনি সংহার।রয়েছে বাঁচার ঠিকানা।


তখন প্রদীপের শিখার মতো বাঁচার ইচ্ছায়
লালিমা সিক্ত সূর্যোদয় দেখে আনন্দে উল্লাসে
হেমন্তের সকালে শিশিরে স্নাত ঘাসদের মতো
উদ্দীপ্ত প্রাণের সত্তার পাপড়ি ছড়িয়ে দিতো।


নব উদ্যমে ধরণীর অপরূপ শোভা অনুভবে
মৌমাছিদের পুষ্প পরাগ রেণু পরশের মতো
আপন হাতের ছোঁয়ায় ধরণীর প্রতিটি কণার
পরশ অনুভবে নিয়ত মজে থাকতে চাইতো।


মানুষ পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের অনুভবে বিশ্বপ্রকৃতিকে
জানতে রোজ দিবস রাতে উন্মুখ থাকত
তারা কোকিলের সুমধুর ডাকে সঙ্গত করে
দু’টি হাত বাড়িয়ে খেলায় আহ্বান জানাত।


বানরদের গাছে গাছে চলাফেরা করতে দেখে
দেখেছি তাদের অতি-উৎসুকে লাফঝাঁপ দিতে।
নদী,জলাশয়ে মৎস্যদের সাঁতার কাটতে দেখে
তারাও জলে নামতো ওদের বাল্যবন্ধু সাজতে।

এখন হিংস্র নেকড়ের পালেরা অর্থের লালসায়
সুন্দর এই প্রকৃতি ও সমাজ টাকে ছিঁড়ে খায়,
আফ্রিকার অরণ্য অযথা পুড়িয়ে ধ্বংস করে
বাসযোগ্য ধরণীকে বিনষ্ট করছে অবলীলায়।


এখন গোধূলি বেলায় জীবন সিঁড়ির বাঁকে
নিজেকে হারাই যেন অবচেতনার অন্ধকারে
পথভ্রান্ত পথিকের মতো হাঁটতে হাঁটতে দেখি
বাঁচার তাগিদে বন্যরাও আসছে বন ছেড়ে।


নির্মম পরিহাস,ঝিঁঝিঁরাও ভুলেছে কোরাস।
জয়ের উল্লাসে প্রেত ছায়ারা ঘুরে বেড়ায়
সাঁঝ-বেলায়।প্রাণের ভয়ে ভীরু খরগোসের
মতো লুকিয়ে বাঁচতে চাই আজ নির্দ্বিধায়।