জেনেছি বাংলার ইতিহাস ঘেঁটে,
মধ্যযুগ শেষে ব্রাহ্মণ্য বাদের দৌলতে
রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ এই বাংলায়
আবদ্ধ ছিল কুসংস্কারের গণ্ডিতে।

ধর্মের নামে সমাজটা গুটিয়ে ছিল
তপ্ত বালিতে জরাগ্রস্ত শামুকের মতো
সমাজে বিধবা বিবাহ ছিল নিষিদ্ধ
কামের দশা খাঁচা বন্দী পাখির মতো।


পাখি কখনো খাঁচা ভাঙতে চাইতো
বজ্রগর্ভ মেঘ ও তার দিকে ছুটতো
ব্যভিচার গভীর গর্ত থেকে বেরিয়ে
ছোবল দিতো বিষাক্ত সাপের মতো।


সাগরে ডুবন্ত সমাজে বাল্য বিধবারা
আজীবন ব্রহ্মচর্য পালনে বাধ্য হতো।
ব্রাহ্মণদের বিধি নিষেধে হিন্দু নারীরা
নিপীড়ন নির্যাতনে অকারণ শৃঙ্খলিত।


এই সমস্যাটির সমাধানে বহু আগে
সমাধান সূত্র দিয়েছেন মুনি পরাশর
সেই সূত্র ধরে নারীদের সংকট মোচনে
এগিয়ে এলেন বঙ্গের ভূমিপুত্র ঈশ্বর।


তিনি নানান প্রাচীন পুঁথি পত্র ঘেঁটে
তথ্য দিলেন পরাশর সংহিতা থেকে
সব মানুষকে গোঁড়ামী মুক্ত করতে
ব্যাখ্যা,অনুবাদ ছড়ালেন চারদিকে।


নারীদের সমাজ শৃঙ্খল মুক্ত করতে
অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন দিনে রাতে।
সব মানুষের কাছে সবিনয় আবেদনে
চেয়েছিলেন শুভবুদ্ধির উদয় ঘটাতে।


বাধাবিঘ্নে আইন ছাড়া ছিল না গতি
ইংরাজ শাসকেরা তখন এই বিষয়ে
সুচিন্তিত নতুন আইন প্রণয়ন করে
তাঁর শুভ প্রচেষ্টাকে দিয়েছে সম্মতি।


হিন্দু সমাজে এই ঈশ্বরের প্রচেষ্টায়
বিধবা বিবাহ আইন বলবৎ হওয়ায়
বাল্য বিধবা কালীমতির বিয়ে দিয়ে
প্রথম নজির গড়লেন সেই আবহে।


ঈশ্বর নারীদের শৃঙ্খল মুক্তির জন্য
দায়ী করলেন অশিক্ষা ও অজ্ঞতা
সামাজিক জীবনে তখন তাই ছিল
অগ্রগতির পথে বড় প্রতিবন্ধকতা।


বঙ্গ নারীদের শৃঙ্খল মুক্তির জন্য
বালিকা বিদ্যালয় গড়লেন চারিদিকে
তিনি চেয়েছিলেন বাংলার নারীদের
মুক্তি দিতে অশিক্ষা ও অজ্ঞতা থেকে।


ইতি পূর্বের দেব সাহিত্য প্রধান বাংলা
বঙ্গের অজেয় এই পুরুষের হাত ধরে
আড়ষ্টতা কাটিয়ে চলতে শুরু করলো
আধুনিক বাংলা গদ্য সাহিত্যের দিকে।


তাঁর প্রভূত প্রচেষ্টায় পেয়েছি বাংলা
গদ্য সাহিত্যের আকর বর্ণ পরিচয়
শিশুদের মনের চাহিদার কথা ভেবে
লিখলেন কথামালা ও বোধোদয়।


নিরলস প্রচেষ্টায় তিনি রাত জেগে
স্রোতে ভাসালেন বাংলা ভাষা তরী
উপহার দিয়ে গেলেন জীবনচরিত
চরিতাবলী সহ  আখ্যান মঞ্জরী।


বাংলার ঈশ্বর বিদ্যার সাগর বটে
করুণার সিন্ধু ও তিনি সেই সাথে।
প্রগতিশীল উদার এই সমাজপতি
স্মরণে মননে থেকো দিবস রাতি।