হুজুর, হুজুর, বছর ঘুরিয়া আসিল খুশি'র ঈদ,
পুত্র মোর নতুন জামার তরে; দিয়াছে তাগিদ।
পত্নী ভীষণ জেদ ধরি'ছে; পায়েস রাঁধিবে বলে,
পরমান্ন আর নতুন জামা; এতো স্বাদ কি চলে?
রোজ পানিতেই ইফতার যাহার; গত ত্রিশ দিন, 
পাজর কঙ্কাল জাগি'ছে মুখে,বক্ষে বাজি'ছে বীণ।
পুত্র, পত্নী'র আবদার শুনিয়া; আসিনু এই দ্বারে,
দান করুন হুজুর, একটু করুণা ক'রে, অভাগারে।
বুজুর্গ হাঁকিল, ভাগ বেটা; টাকা নাই কাড়িকাড়ি,
সবে মাত্র কিনিয়াছি, নামীদামী দশ খানা শাড়ি।
ভিখারি ফের চলিল; লই'ছে সাহেব'র বাড়ি খুঁজি;
সাহেব, সাহেব, রমজান শেষে; ঈদ আসিল বুঝি।
পুত্র মোর বায়না ধরি'ছে; সে নতুন জামা চায়,
ঈদের খুশি'র ভাগ লইতে, মত্ত হইয়াছে প্রায়।
সাহেব হাঁকিল, দূর হ' শালা! এতো সখ কিসে?
ভিখারি'র আবার ঈদ কিসের; হারাইয়াছো দিশে?
ভিখারি চলিল আপন পথে; দুঃখ ভরা মন হায়,
ছেঁড়া কোর্তা পরিধেয় তাহার জীর্ণশীর্ণ কায়।
হায়রে পাষাণ ধন আছে বটে; দয়া নাই উহাতে ,
দূরদূর করি' তাড়াইয়া দিল; শূন্য, খালি হাতে।
ভুরিভুরি যাহার অর্থ কড়ি; গরীবে করেনা দান,
কোন নিয়মে বলি মানুষ তা'রে;ওই তো শয়তান। 
ভিখারি চলিল হতাশায় ভরি' ; কে করিবে দান?
কেহ কি নাই এ ধরায়? খাঁটি বুজুর্গ মুসলমান।
সর্বত্র ঘুরিয়া ফিরিয়া; শূন্য হস্তে ফিরিল বাড়ি,
অনাহারে তাহার পুত্র কাঁদে; ঘরে নাই ইফতারি।
ঈদের খরচ , ঋণের বোঝা; চিন্তায় হৃদয় ঝামা,
পুত্রকে সে কী জবাব দিবে; কোথায় ঈদের জামা?
ভিখারি তা'র অশ্রু সলিলে ভাসায়ে বক্ষ খানি,
খুশির ঈদে বহিয়া চলিল ; হতাশায় ভরা ঘানি।
ঈদের চাঁদ উঠি'ছে ঐ; আকাশ রক্ত বর্ণ লাল,
ভিখারি'র ঘর ঢাকি'ছে মেঘে ; উঠে নাই হেলাল।
ঘুমন্ত পুত্রের পানে চাহিয়া; রাত্রি কাটিল তাহার ,
দুনিয়ার যত দুঃখ আছে ; বক্ষে করিলো ভার।
ঈদগাহে চলিল অভাগা; পুত্র জাগে নাই তাহার,
অভুক্ত পত্নী'র জল মাখা হাসি; হৃদয়ে হাহাকার।
ঈদগাহের কোণায় বসিয়া ভিখারি, দু'হাত তুলিয়া,
সহ্যাতীত ব্যথায় হাউমাউ স্বরে উঠিল কাঁদিয়া।
মালিক! মালিক!! আজি তুমি সাক্ষী রহিও ওরে,
ঈদ আসিয়াছে ধনী'র ঘরে; আসে নাই মোর ঘরে।