জানি, ভাই তোমার জঠরাগ্নি কারোর চেয়ে কম নয়
ঘাম রক্ত বেচে দিন শেষে তবুও তোমাকেই আধপেটা থাকতে হয়
সারা দিনের ঘাম জোর করে তোমাকে ঘুমের দেশে নিয়ে যায়
ফুটপাত; ভ্যান রিক্সা; ঠেলার চালি, দোকানের রক কেউই পর নয়  
খোলা আকাশের নিচে মশারা হয়ত ভাবে, মানুষের চামড়া এত মোটা হয়
ওদের হুলেও হয়ত ব্যথা হয়; কিন্তু তুমি পাও না, একথা সত্যি নয় !  


আচ্ছা, ভাই তুমি কী ভগবান আল্লা যীশু কে জানো ?
নাকি, তোমার ঐ ঘাম, ফুলে ওঠা ধমনী, দধীচি হাড়ের কথাই শোন
কেন জানাও না ঐ দূরের শক্তিমানদের তোমার দূখ্য, তোমাদের ব্যথা  
জন্মাবার আগে আকাশবাণীতে শুনেছিলে কী তাহাদের কোন কথা  
রিক্সা ঠ্যালা হাতুড়ি শাবল গাঁইতি কাস্তে ছাড়া থাকবিনে এক দন্ড
এরাই যোগাবে ঘাস জল তোদের মুখে; বললেও কেউ কেউ মন্দ ।  


তোমরা কি শুনেছ ১৮৭৫’র এর কথা, জানো কি ১৮৮৬’র ব্যথা  
অনেক কাল হয়ে গেল, চাকা ঘুরছে; বাবুদের মনে পড়ছে সে কথা
সুদে আসলে করছে হিসেব; জের টেনে টেনে, কত কমে শ্রম নেবে কিনে  
পৃথিবীর সকল দেশের শ্রমিকের একটাই নাম, বাবুরা ঠিক রেখেছে চিনে
এখনও সময় আছে জেগে ওঠো ভাই; কোটি কন্ঠে হাঁক দাও বজ্র নির্ঘোষ
ভগবান আল্লা যীশুর যদি আসন টলাতে পারো, কেটে যাবে সব দোষ।


তোমারা কী জানো ! তোমাদের  ঘাম, রক্তের সুবাস ঠিক কতটা মিঠে
দেখেছ কী কাদের লাইন পড়ে, কারা আসে  নিতে চায় লুটে-পুটে  
গরম থাকতে থাকতে লোহাটাকে তাই জোরসে হাতুড়ি  মারো
তোমাদের অধিকার সব লুঠ হয়ে যাবে, অথবা গলা জড়িয়ে কেঁদে মর
শুনে যাও, জেনে রাখো বন্ধু, শয়তানের কখনো ছলের হয়না অভাব
গরিবি হটাতে কেউ চায় না, গরীব তৈরি করাটাই পুঁজির স্বভাব।  


সোনারপুর
১৫.৫.২০২০

[ ১৮৭৫ সাল আমেরিকায় পেনসিলভেনিয়ার  কিছু অসংগঠিত শ্রমিক জ্বলে উঠেছিল শ্রম ও শ্রমজীবীর মুক্তির জন্য। এই মুক্তির দাবানলে পুড়ল  শিকাগোর হ্যা মার্কেটের আভিজাত্যের দম্ভ। পুলিশ গুলি চালাল নিরীহ শ্রমিকদের উপর, আত্মদান করল অসংখ্য  শ্রমিক, সেটি ১৮৮৬ সালের ১ মে।  শ্রমিকদের দাবী ছিল মানুষের মত বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারের স্বপক্ষে। মানবিকতার দাবি ছিল পুঁজি দানবের শোষণের বিপক্ষে । সুদীর্ঘ সময় পরেও শ্রমিকের কাঙ্খিত অর্জন বলতে তেমন কিছু নেই, বরং চক্রান্ত চলছে শ্রমিক মারার,  শ্রমের ন্যায্য মূল্য কেড়ে নেওয়ার ।]