‘দরজাটা খুলুন’-বলল অরুণ,
সাথে ফিসফিস করে আরও কিছু
ঘরের বাইরে থেকে আবছা-আঁধারে,
কালো-ওড়নায় মুখ ঢাকা শীতের প্রত্যুষে।
সে ঢুকলো ঘরে কম্পমান হাতে বৃদ্ধ
দরজা খোলার সাথে সাথে।
বললো বৃদ্ধকে,
‘দাদু!কালীঘাট যাবেন বলেছিলেন,পূজা দিতে।
-চলুন,আপনাকে তুলে দিয়ে আসি বাসে।
যাত্রার প্রস্তুতিপর্ব সেরে বৃদ্ধ বসেছিলেন ঘরে।
লাঠি হাতে বের হলেন আরাধ্য দেবতাকে স্মরণ করে।
বৃদ্ধের গোছান ব্যাগ অরুণের কাঁধে
দু’জনে পা-বাড়ালো,পথে।
ধীর গতিতে তিন-চার মিনিট হেঁটে স্টপেজে পৌঁছে
অরুণ বৃদ্ধের হাত ধরে তুলে দিল,বাসে।
‘একটু নামিয়ে দেবেন-কালীঘাটে’,
সবিনয়ে বলল সে,কন্ডাক্টরকে।
বাস ছুটল তীরের-ফলার মতো,জোরে আরও জোরে।
কয়েকটা স্টপেজ যেতেই এক ঝাঁকুনি খেয়ে দাঁড়ালো নিমেষে
সিগনালের মুখে,পুলিশের ধমক খেয়ে।
ব্যথা লাগল বৃদ্ধের বুকে,পিঠে-হাঁটুতে।
উঁহু:…বলে চিৎকার করে উঠলেন,বৃদ্ধ।
সারা শরীরে ব্যথা,কাতরাতে লাগলেন যন্ত্রণায়।
চমক আরও একটু বাকি!
কোথা থেকে তড়িঘড়ি খাঁকি-পোশাকে
এক কর্তব্যরত পুলিশ এসে বজ্রকন্ঠে হাঁক দিলো
যাত্রীরা নামুন তাড়াতাড়ি।
লাঠিতে ভর দিয়ে চলা বৃদ্ধ যাত্রীকেও
সে নামালো হাত ধরে।
কৌতূহল বশে এক যাত্রী জিজ্ঞেস করলো তাকে,
বলবেন,কোথায় কি ঘটনা ঘটেছে?
পুলিশ বলল তাকে, দেখুন এই প্রত্যুষে
‘ড্রাইভার’,সিগনালের নিয়ম ভেঙ্গেছে।
তাকে,বড় অঙ্কের জরিমানা দিতে হবে।
নয়তো গাড়ি নিয়ে যাব থানায়,
ড্রাইভার-কন্ডাক্টরকে কোর্টের কাঠগড়ায়।
যথার্থ বন্দোবস্ত বটে।
আঁধারে কত কী ঘটে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের দেশে।
ভাবছে ড্রাইভার,ক’জন নিয়মের তোয়াক্কা করে এদেশে
বহু অপরাধী বখরা দিয়ে চলে যায় হেসে
নয়তো আইনের ফাঁক গলে কোমরে ধুতি কষে,
জঘন্য অপরাধ করেও অর্থদণ্ড দিয়ে ফিরে আসে।  
অশক্ত বৃদ্ধের বুকে-পিঠে-পায়ে তখনও ব্যথা,
হঠাৎ বাসের ঝাঁকুনিতে সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠা
এক সহযাত্রীর কনুই ঠেকল,তাঁর বুকে।
দুর্যোগ একেই বলে।তাঁকে ঠেলল কেহ পিছন থেকে,
ধাক্কা লাগল বেশ,বৃদ্ধের পিঠে।
ঠিক তখনি পাশ থেকে কেহ বলল তাঁকে
দাদু!কালীঘাট এসে গেছে।
এ যাত্রায় পা-হড়কে বৃদ্ধ আছড়ে পড়লেন
সিটের ফ্রেমে,-লোহার পোষ্টে।
আর একটু হলে অবধারিত গোল
বৃদ্ধের প্রাণটা বল হয়ে ঢুকত জালে।
দর্শকরা হৈ-হৈ করে ছুটে আসত,
তাঁকে গলা জড়িয়ে ধরে দেখত-
চোখ-উল্টে,ঘাড় কাত-করে আছেন কেহ।
-বৃদ্ধের মৃতদেহ!
তারা হাতে হাত ধরে তাঁকে তুলত শব-বাহী গাড়িতে।
শেষে শ্মশানে স্টপেজ দিয়ে সটান চিতাতে।
এ’যাত্রায় বাদ গেল,হড়কে গেছে বলে।