এই কবিতাটি পড়ে সারাদুনিয়া তে সাড়াজাগানো রাশিয়ার লেখক 'গোর্কি'র  'মাদার' উপন্যাস নিয়ে কিছু কথা না বলার লোভ সামলাতে পারলাম না । কবিতাটির সঙ্গে সরাসরি যোগ না থাকলেও কিছু যেন মিল খুঁজে পেলাম। তাই আমার কলমটি চলে গেলো আলোচনা সভায়।


মা এর  বাস্তব চরিত্রের ওপর ভিত্তি করে এই উপন্যাস ! বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে সর্বপ্রথম তিনি পাঠকদের কাছে হাজির করলেন এক শ্রমজীবী মা কে ও তাঁর রাজনৈতিক সংগ্রাম নিয়ে ! সন্তানের নাম ছিল 'পাভেল' ! গল্পের প্রথমদিকে লেখক দেখালেন ভীরু মা ! মাতাল স্বামীর অত্যাচারে বিপন্ন এক নারী ! দিনের পর দিন 'পাভেল' দেখেছে তার মা কে পিতার অত্যাচার ! একদিন সহ্য করতে না পেরে হাতে তুলে নিলেন হাতুড়ি ! তীব্র আঘাত হানলো সে পিতার ওপর ! মা 'পেলেগেয়া' প্রথমে গেলেন ভয় পেয়ে ! কিন্তু নিজেকে পাল্টে ফেলে এসে দাঁড়ালেন পুত্রের পাশে !
পুত্রকে গ্রেফতার করা হলো ! আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সকল মায়েদের প্রতি তার দীপ্ত ধ্বনি উচ্চারিত হলো "দুনিয়া এগিয়ে চলেছে ,আমাদের সন্তানেরা তাদের ছড়ানো আলোয় আলোকিত হবে বিশ্ব ! আমার পুনরুজ্জীবিত আত্মাকে মারতে পারবেনা ওরা" ! সেই থেকে 'পেলেগেয়া" হয়ে গেলেন সকলের মা !
গোর্কির এই উপন্যাস মা চরিত্রের মডেল ছড়িয়ে দিলো বিশ্বের নানান প্রান্তে !
সেই ঢেও এসে পড়লো বাঙালির মধ্যে ! বাঙালি সাহিত্যিক দের কলম উঠলো গর্জে একই ভাষায় !
কলম ধরলেন প্রথমে লেখক 'মানিক বন্দোপাধ্যায়' ! প্রথমে লিখলেন "জননী" ! তারপর লিখলেন "হারানের নাতজামাই" ! গ্রামীণ সংস্কারকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে মেয়েকে পাঠিয়ে দিলেন ময়নার মা কৃষকনেতা র সঙ্গে বৈপ্লবিক আন্দোলন করতে ! গল্পটি তেভাগা আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা !
(তেভাগা আন্দোলন ১৯৪৬ সালের ডিসেম্বর -এ শুরু হয়ে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত চলে। বর্গা বা ভাগ-চাষীরা এতে অংশ নেয়। মোট উৎপন্ন ফসলের তিন ভাগের দুইভাগ পাবে চাষী, এক ভাগ জমির মালিক- এই দাবি থেকেই তেভাগা আন্দোলনের সূত্রপাত। এর আগে বর্গাপ্রথায় জমির সমস্ত ফসল মালিকের গোলায় উঠত !)
আর এই তেভাগা আন্দোলনের যিনি নেত্রী তিনিও ছিলেন এক মা "ইলা মিত্র"! একজন বাঙালি মহিয়সী নারী এবং সংগ্রামী কৃষক নেতা। বাংলার শোষিত ও বঞ্চিত কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি সংগ্রাম করেছেন। ভোগ করেছেন অমানুষিক নির্যাতন।
মহাশ্বেতার লেখায় পাই স্তনদায়িনী মা ,জাহ্নবী মা , সমাজ বিরোধী র মা ইত্যাদি !
সমরেশ বসুর লিখিত "প্রতিশোধ" ----"সন্তানসম্ভবা রাধা গর্জে উঠেছিল "আমি শিবদাস মোড়লের মাইয়া না !
ধান কারবানি আমার কাছ থেইক্যা ? কত মায়ের দুধ খাইছে ঢ্যামনারা দেইখ্যা লমু ! তুমি যাও গা-দেরি কইরো না ! পুলিশের গুলিতে রাধা মারা যায় !


মা সর্বদা শক্তিস্বরূপা ও পূজনীয় !


ভালোবাসায় ভালো থাকুন সকলে।